কাদের আলির কর্ম কির্তি

 


( নেককের পুতি মোর হাতজোড় অনুরোধ। নেকা কোনা কার মুই কবার না পাং। পড়ি এত ভাল নাগছিল নাম ছাড়ায় দেনু। নেকা কোনা আও’র জন্য পাঠে দিছিল মেলাদিন আগত। যার নেকা তাই দয়া-মায়া করি হামার সাথত যোগাযোগ কর।)

গল্পটা শুনলে মেলা লোক , বুঝবে গল্প খ্যান মুই সত্য কইচঙ। বেশি দুরের কথা নোয়ায় হামার পাশের বাড়ির কথা। কাদের আলিরা তিন ভাই। বাপ বহু আগত মরি গেইছে। এমরা আগত অন্য গ্রামত আছিল। বছর বিশেক আগত হামার বাড়ির পাশত বাড়ি কচ্চে। লোক গুল্যা বেশি সুবিধ্যার নোয়ায়, খুব আগ । মানসে কয় এমরা বলে পাঠান জাত। তিন ভাইয়ে বিয়্যা কচ্চে। বড় আর মেঝটা কামলা দিয়ে ভাত খায়। বাপেও কয় শতক ভুই থুইয়্যা গেইছে। ছোটটা কাদের আলী,কাজ কামের ধার ধারেনা, বাপে যে দুখেন ভুই থুইচে তারে আবাদ দিয়ে কোন রকম চলে। কাদের আলি বিয়্যা কচ্চে আপন মামাতো বোনক। বেটি ছওয়াটার অন্য জাগাত বিয়্যা হছিল, বুদ্দি কম সেই জন্তে সঙসার হয় নাই। বেটি ছওয়টা ভালো ঘরের, ভাল ঘরত বিয়্যাও হছিল, সঙসার ভাঙগি যায়া যখন কাদের আলির সাথে বিয়্যা হইল। তখন থাকি বেটি ছোওয়াটা নিজের হাল ছাড়ি দেইল । ভাল মতন সাজে না, গাঁয়ও ধোয়না সাতদিনে একদিন। কাদের আলিরও বুদ্দি কম । নিজের মাথা খাটায়া কিছু করবের পায়না । সঙসারত এক জনের বুদ্দি কম হইলে আর একজন চালায়া নেয় । এমার দুই জনক আল্লা চালায় । ভুইয়ত যা আবাদ হয় তাক দিয়্যা দুই মাস খাওয়ার মতন ভাত হয়না। তেল মরুচ কেনার ট্যাকা নাই, কোন রকম সিদ্দ ভাত খায়া দিন পার করে । যখন ঘরের ভাত ফুরি যায়প, তখন না খায়া দিন কাটায়। এই ভাবে চলতে চলতে সঙসারত একনা নতুন অথিতি আসিল । ব্যাটা ছওয়া । ব্যাটার বাপ হওয়া যে সে মরদের কাম নোয়ায় এই কয়া কাদের আলি লোকের আগত বুক ফোলায়। বুকের দুদ দিয়ে জতদিন ছওয়ার প্যাট চলছে, ততদিন কাদের আলির সঙসারও ভালো চলছে। এখন ছওয়ার বুকের দুদে প্যাট ভরেনা। কাদের আলির মনত একনা চিন্ত্যা আসিল , কি করা যায়। এলা ইয়্যার ওইয়্যার কামত হেসার দিয়্যা অল্প সল্প কামাই করে। কাদের আলির মনত আশা বান্দিল, ব্যাটা যখন হচে তখন চিন্ত্যা কি? ব্যাটা বড় হল্যা কামাই করি খোয়াইবে। এই ভাবে দেখতে দেখতে ব্যাটার বয়স যখন আট দশ হইল তবুও ব্যাটার বুদ্দির উদয় হইল ন্যা। ব্যাটা হাতে পায়ে লম্বা হয়। মাথায় বুদ্দি হয়না। এত বড় ছওয়া তাও মার কোলত চরি ব্যারায়। চাচা সম্পর্কের লোকেরা যদি জিজ্ঞেস করে তোর মার বিয়ে হইচে? তাক শুনি উত্তর দেয়, না বিয়্যা হয় নাই, মাও আব্বা ওমার বিয়্যাত মোক ডাকায়ও নাই বিয়্যার দাওয়াতও খাওয়ায় নাই। ছওয়ার বুদ্দি বারিল ন্যা, কিন্তু খুদ্যা বারিল। তিন বেলা ভাত চায়। ছওয়ার প্যাটত ভাত দিব্যার না পায়া কাদের আলির মনত দুককো বারি গেল। মনত চিন্ত্যা আসিল কেমনে কি করি আয় করা যায়। জোরের কাম তো করব্যারে মনায় না। কাম না করতে করতে লোকে তো আর কামলাতো নেয় না। গ্রামের আর এক লোক কাম না করি সট কাটে সঙসার চালায়। দুরত যায়া নুরানি মাদ্রাসাত ছওয়া পড়ে এই কয়া চাউল তুলি সঙসার চালায়। ওই লোকের সহযোগী দরকার। কাদের আলিক বুদ্দি দেইল, খালি বস্তা উবেইবে, সারা দিন সাথে থাকলে দুই কেজি চাউল দিবে। কতা কোনা কাদের আলির মনত ধরিল। তারপর থাকি ওই লোকের সাথে যায়। সারাদিন সাথে থাকে যা পায় তা দিয়্যা সঙসার চলায়। এই ভাবে কাদের আলির বছর খানিক কাটি গেল। একদিন হটাত নয়া সমস্যার উদয় হইল। যে লোকটার সাথে কাদের আলি ভিক্ষ্যাত নাম দিছিল, সেই লোকটা অসুক হয়া বিছন্যাত পরি গেইল। কাদের আলির ফির সঙসারত অভাব নামি আসিল। কাদের আলি বেকার হইল। সমায় কাটেনা। তার পর একদিন অসুস্ত লোকটার কাছত গেল। যায়া কয় ভাই তোমার সাতে তো ভালে আছিনু, তোমরাও বিচন্যাত পরি গেল্যান মোরো কামাই বন্দ হইল। কাদের আলির কতা শুনি লোকটা কয় মোর যা শরিলের অবস্তা মোর দারায় আর কামকাজ হবার নয় । তুই ভালো আছিস, যদি মোর বুদ্দি ধরিস তাকলে তোক একনা বুদ্দি দিবের পাঙ। কতা শুনি কাদের আলি গার বগলত চাপি বসি কয়, কন দেকি কি বুদ্দি! যদি কতা মতন কাজ করিস তাকলে কঙ শোন, এই কামত নামলে তোর ব্যাটাক নাগবে। তোর ব্যাটা ধরি অতি দূর গ্রামত যাবু। তুই কোনো কতা কবার নস বোবা হওয়া থাকপু। তোর ব্যাটা কইবে আব্বা কতা কবার পায়না ভিক্ষা দেও। একন্যা কাম করব্যার পাবার নস। কাদের আলি লাফ মারি উটি কয় পাবার নঙ মানে, কাল থাকি শুরু করিম। তার পর থাকি কাদের আলি নয়া ব্যাবসা সুরু করি দেইল। দূর গ্রামত যায় আর ভিক্ষ্যা করি আনে। কাদের আলির ব্যাবসা ভালই চলব্যার নাগিল। লোকে চাল দেয়, ট্যাকা দেয়, জামা কাপর দেয়। কাদের আলির সঙসারের নউক্যা এলা সুক্যান দিয়্যা যায়। যখন মানসের আয় বারে তখন ব্যায়ের ও রাস্তা ব্যারায়। সখ শান্তি বারি যায়। কাদের আলির ও নয়া সখ উদয় হইচে, বিড়ি খাওয়া সখ। নিজে কেনে কম লোকে ফাও খাওয়ায় বেশি। বুদ্দি কম, লোকে বিড়ি দেয়, জোরে জোরে টান মারে বিড়ি খাওয়ার বাজি ধরে। মাঝে মদ্দে এক বইসনায় ১০ টা বিড়ি খায়। ভিক্ষ্যা করে বাজার আনে , সাথে দু প্যাকেট বিড়িও আনে। এখন দু প্যাকেট বিড়ি ছাড়া কাদের আলির চলেনা। ভালই চলছিল কাদের আলি। কদিন থেকে কি যেন হইচে। ভিক্ষায় যায়না খালি কাশে। সরিল টা ভাল লাগেনা। কামাই নাই, পেটে ভাত নাই। বিড়ির নেশা ওঠে। লোকের কাছে টাকা চাইলে দেয়না। চার পয়সার বিড়ি দেয়। কাদের আলি বিড়িতে টান দিয়ে দুঃখ ভোলে। একদিন ভোর বেলা কাদের আলির খুব কাশি উঠিল , কাশি থামেনা । মাঝে মাঝে কাশি থাকি অক্ত আইসে। কাইও খোঁজ আকিলনা। আধ পাগল বউ। দুই ট্যা হাঁস ব্যাচেয়া কাদের আলিক হাস্পাতাল নিয়ে গেইল। যাগা মিলিল হাস্পাতালের বারান্দাত। সারাদিন পরি থকিল ডাক্তার তো দুরের কতা আজরাইল ও আসিল ন্যা। কাদের আলি যন্ত্রণায় ছটফট করে । বউ পাগলি হইলেও স্বামীর কষ্ট বোঝে। কোটে যাব্যা কাক ডাকাব্যা ঠাওর করব্যার পায়না। কুল না পায়া হাউমাউ করি আল্লাক ডাকে আর কয়; আল্লা গরিব মানসের কাইয়ও নাই । এত কষ্ট মুই আর সবার পাঙ না। মোর সামিক তুই নিয়্যা যা । অবশেষ দুই দিন পর আজরাইল আসি কাদের আলিক নিয়া গেল। কাদের আলির বউ কান্দে আর আল্লাক কয়, মুই জানঙ মোর সোয়ামির চিকিতস্যা হবার নয়, তুই নিয়্যা জাবু, নিয়্যায় যদি যাবু, মোর সোয়ামিক এত কষ্ট দিলু ক্যা? গরিবের ডাক আজরাইলো শোনেনা! আজরাইলো শোনেনা........... । এই নাকান কাদের আলি হামার সমাজত ম্যালা আছে, কাই বা আকে কার খবর !

Post a Comment

1 Comments

  1. লেখক মৃত মোঃ রওশান আলী

    ReplyDelete