ঘটকালি

 


মাসুম বিল্লাহ্
নানান মাইনষে নানান কিছু করে, কিন্তু মুই কি কিছুই করবার পাইম না। জেদখান মনের মইদ্ধ্যে চাপিল ভাল করি। যে করেই হোওক মোক কিছু একটা করায় লাগবে। নাইলে যে গ্রামত সবাই মোক অকম্মা কয়া ডাকিবে।
কিন্তু কি করিম সেইটা ভাবিনু, শেষমেশ ঠিক করনু ঘটকালি করিম, বিয়ার ঘটকালি। পাত্র পক্ষের কাছতও টেকা পাইম, আবার পাত্রি পক্ষের কাছতও থাকি। মোর দিন রমরমা যাইবে।
একটা বিয়ার কান্ড শোন, নদীর ওপারের হারেচের বেটার সাথে এপারের জমিরনের বেটির আলাপ করনু।
জমিরনেরর বেটি যেমন সুন্দর তেমন তার গুনও।
পাত্রের পচ্ছন্দ হইল, এখন আটকিল খালি যৌতুক নিয়া। এ্যালা কি করং মুই। মোর ঘটকালি জীবনত তো কোন বিয়া নাই যে আটকিছে, এইটা যদি আটকে তাইলে মোর ঘটকালির সুনাম যাইবে। চুপ করি আন্দন ঘরত যাআ জমিরনক বুঝানুং যে পাত্র পক্ষ কিছু কম নিবার আজি হইছে, একখান সাইকেল আর ২২,০০০ টেকা।
- না না, মুই ওতো দিবার পাইম না। ঘটক ভাই, আর কিছু কম হয় কিনা দেখেন।
- ধুর পাগলি, এদন পাত্র আর পাবু না। তোর বেটির জন্য কত্তো খোজার পর পাইছং। ছাড়ি দিলে পরে বুঝবু।
- আচ্ছা , তোমরা যখন কইছেন মুই আজি।
আর এদিকে পাত্রের বাপোক কনু, একখান সাইকেল দিবে আর ২০,০০০ টেকা দিবে। গরিব মানুষ, বুঝেন তো।
সবাই আজি হইল, আর মোর কিছু বেশি টেকা কামাই হইল। খানু ফির মোরগের গোস্তো দিয়া। আহ্ কি শান্তি!
এই মুই কছিমুদ্দিন ঘটকের হাত দিয়া হাজার খানেক বিয়া হইল, বেটাবেটি হইল। সুখের সংসার হইল।
কিন্তু কি জানেন বাহে, মাইষের ঘটকালি করতে করতে মোর চুল সাদা হইল, দুই একটা দাঁতও পড়িল, মোর বিয়া আর হইল না।
এ্যালা আর ঘটকালি চলে না বাহে, এ্যালা নাকি পার্কত যাআ প্রেম করে, বাড়িত কয়, মানি না নিলে পালায় বিয়া করে। মোর রমরমা দিনত ভাটা পড়ছে বাহে। আগত যেগলা কামাইছং, সেগলায় বসি বসি খাং। কয়দিন আর বাচি থাকিম। দিন যায় ডাল ভাত খায়া। আপছোস একটাই, ফরজ কাজটা আর করা হইল না। তারপরেও মুই ভরসা ছাড়ং নাই। 

আজ মোর বিয়ার পাঁচ বছর হইল। ক্যামন করি হইল সেকনা না কইলে তোমরা এলা কইবেন এই ক্যা এদং। মুই গেছনু আবুলের বেটার সাথত মকবুলের বেটির বিয়া দিয়ার। সউগ ঠিক আছিল ধপ করি আবুলের বেটা দেইল বিয়া কোনা ভাঙ্গি। মকবুলের মাথা হেট। মুই কনু তোমার বেটিক ‍মুই বিয়া করিম তবু কপাল পুরবার দিবারন্নং। ওমরা হইল আজি। বিয়া কোনা মোরও হইল।  এলা একটায় দুক্ক বেটাবেটি একটাও হইল না, এইটা মোর দোষ না মোর মাইয়ার দোষ মুই কিচ্ছু জানং না, খালি কয়বার নদীর ওপারের জসিম কবিরাজের কাছে গেছিনুং হামরা দুইজন, কত গাছের পাতা, শিপ্যা দেইল,তাতেও কেনবা বাচ্চা হইল না।
নিন থাকি উঠতেই শোনোং ওমুকের বেটা হইল, তমুকের বেটি হইল, মুই আর মোর মাইয়া খালি আফসোস করোং।
বাঁশের কঞ্চি ভাঙ্গি দাঁত ঘষতে ঘষতে দেখপ্যার যাং, ইশশ! কি সুন্দর! প্রাণটা ভরি যায়।
মোর মাইয়া রোজ সকালে নামায পড়ে,কোরান পড়ে। মকো অনেকদিন কছিল, নামায পড়বার। মুই কছিনু, তুই তো নামায পড়িস, তার পরেও আল্লাহ তোর ওপর চোখ তুলে দ্যাখে না ক্যান।
- শোন, মুই কি কং, হামরা যদি আল্লাহক খুশি করবার পাই তাইলে হামাকো আল্লাহ খুশি করবে।
- হইছে হইছে, জাঁই দিবে এমনিতেও দিবে ওমনিতেও দিবে।
একদিন হামার গ্রামত পীরসাইব আসিল সভা করব্যার, মোর মাইয়া মোক কইল....
ওগো চলোতো একনা পীর সাইবের কাছত যাই,
হুজুরক যায়া কই,
হুজুর হামার বাচ্চাকাচ্চা হয় না ক্যান, হামাক একনা দোয়া করি দ্যাও।
- হমম আল্লায় না দেয় আর হুজুর দিবে, তয়
যখন কোলু নিয়্যা যাইম।
.
হুজুরক দেখার পর হুজুর কয় আল্লাহ দিলে সউগ হয়। তোমরা শহরত ডাক্তার দেখান। হামরা আল্লাহর নাম নিয়া চিকিৎসা করলং। ৬ মাসের মইধ্যে মোর মাইয়া বমি করা শুরু করিল, মাথা ঘোড়াঘুড়ি শুরু করিল। সবাই কওয়া কওয়ি শুরু করিল, তোর তো কপাল ভালা, হুজুরের দোয়ায় বাপ হবু। 
.
একদিন স্বপ্নে দেখনু, মুই বেটার বাপ হইছং।
গ্রামের সবাই ভীড় করিল মোর বাড়িত, মোর রাজপুতকে দেখবার জন্যে। জসিম কবিরাজও আসলো, আর কইলো
- গফু তুই সত্যি ভাগ্যবান, এমন রাজপুত পাইছিস।
- হ চাচা দোয়া কইরেন।
পীরসাইবও দেইখা মোরে কইলো,
আমি কিছু করি নাই,যা করছে ঐ আল্লাহ করছে,এখন থাইকা আল্লারে ডাকো, নামায কালাম শুরু কইরা দাও গফু, আর শোন পোলাডারে হেফজখানায় দিও। তুমি মইরা গেলে ওর দোয়া বেশি কাজে লাগবো।
মুইও মনে মনে কইনু, ও আল্লাহ তুমি মোরে খুশি করছো, তোমারেও খুশি করতে মোর যাহা করা লাগে করমু তয়, মোর বেটার ক্ষতি হইতে দিও না।

মাসুম বিল্লাহ্
গোড়াই শ্যামপুর, দূর্গাপুর, উলিপুর, কুড়িগ্রাম। 

Post a Comment

0 Comments